জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের যতো সমস্যা
বাংলাদেশে কার্বন বিপর্যয়
মিৎসুবিশি, জেরা, জাইকা ও জিই ভার্নোভা চট্টগ্রামে একটি ‘কার্বন বিপর্যয়’ উত্পন্ন করতে যাচ্ছে, যার জলবায়ুগত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা বাংলাদেশের পক্ষে তো সম্ভব নয়ই, এমনকি গোটা বিশ্বের পক্ষেও অসম্ভব। একইসাথে প্রকল্পটি জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ।
জলবায়ুর ক্ষতি
বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পগুলো থেকে প্রায় ১.৩৮ বিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমপরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরিত হবে।
পরিহারযোগ্য মৃত্যু
প্রতি বছর জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে ৭৩,০০০ মানুষ মারা যান। জীবাশ্ম জ্বালানি পরিহার করলেই তাদের মৃত্যু এড়ানো সম্ভব।
অতিরিক্ত ব্যয়
২০৪১ সাল নাগাদ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতেই বাংলাদেশের বার্ষিক খরচ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭-১১বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রস্তাবিত এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য খরচ হবে ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং প্রস্তাবিত এলএনজি আমদানি প্রকল্পের জন্য আনুমানিক ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে।
বাংলাদেশের এলএনজি পাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের পরিবর্তে ৬২ গিগাওয়াট নতুন পরিচ্ছন্ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির তহবিল হতে পারে, যা দেশের বর্তমান গ্যাস পাওয়ার ফ্লিটকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে পারবে, বা বর্তমান কয়লা বিদ্যুৎ ক্ষমতাকে ৪ গুণ প্রতিস্থাপন করতে পারবে।
ঝুঁকির বিবরণ
চট্টগ্রামে নয়নাভিরাম সৈকত ও দেশের সর্বশেষ রেইনফরেস্ট অবস্থিত। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এই অঞ্চল ও এর বাসিন্দারা। অথচ, বায়ু ও সৌর শক্তির মতো নবায়নযোগ্য উৎসের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারে। এসব উৎসের জন্য ব্যয়বহুল ও পরিবেশ ধ্বংসকারী জ্বালানি আমদানিরও প্রয়োজন হবে না।
জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি
গ্রেট এশিয়ান এলিফ্যান্ট, ক্লাউডেড লেপার্ড ও চাইনিজ প্যাঙ্গোলিন সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে অন্তত ২৬টি বিশ্বব্যাপী বিপন্ন প্রজাতির প্রাণি রয়েছে।
চট্টগ্রাম
নয়নাভিরাম সৈকত
বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার। সুনীল জলরাশী, সোনালী বালুকাবেলা ও উষ্ণ আবহাওয়ার টানে প্রতি বছর অন্তত ১ কোটি পর্যটক ছুটে যান ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এই সৈকতে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা ও চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লক্ষ্যে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পগুলো বন্ধের দাবি জানিয়ে জিই ভার্নোভা মিৎসুবিশি, জেরা, ও জাইকা সহ অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইমেইল করুন।
মাতারবাড়ী ১: জনগোষ্ঠী ও পরিবেশের ক্ষতি
ইতোমধ্যেই মাতারবাড়ি ১ স্থানীয় জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপনা নির্মানের জন্য সাধারণ মানুষকে তাদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেইসাথে তারা তাদের জীবন-জীবিকা হারিয়েছে।
মাতারবাড়ি ১ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ একটি নমূনা, যে বাংলাদেশের এলএনজি বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ ঘটলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী কী আশা করতে পারে।
৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
মাতারবাড়ি ১ এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি, এবং এবং এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও পরিবেশের উপর দীর্ঘস্থায়ী, নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
২০০০
বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে কোহেলিয়া নদী ভরাট করায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ২০০০ জেলের জীবিকা।
২০২২ সালের জুনে জাপান সরকার ঘোষণা করে যে জাপান মাতারবাড়ি ২ কয়লা প্রকল্প অর্থায়ন করবে না। বাংলাদেশ সরকারও মাতারবাড়ি ২ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে। মাতারবাড়ি ২ এর পরিবর্তে এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার।
ব্যয়বহুল এলএনজি’র বিস্তার: বিদেশিদের এলএনজি-সংক্রান্ত স্বার্থ যেভাবে বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি তৈরি করছে
বর্তমানে বাংলাদেশ বেশ বড় ধরনের একটি জ্বালানী সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। উচ্চমূল্যে আমদানিকৃত জীবাশ্ম গ্যাস থেকে তৈরি বিদ্যুতের ওপর অতিনির্ভরশীলতার ফলেই দেশে বেড়েছে লোডশেডিংও।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের উচিৎ ছিলো অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারেরি উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য দেশীয় জ্বালানিকে গুরুত্ব দেয়া। অথচ, তা না করে বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ পরিবেশ বান্ধব, সবুজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হতে পারে, যা পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণের জন্য কমমূল্যে সাশ্রয়ী বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারে।